উপজেলার কাকারায় উৎপাদিত তরমুজের খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। মাতামুহুরী নদীর চরে উৎপাদিত হত বিপুল পরিমাণ চীনা বাদাম। এখানকার শীতকালীন সবজির জন্য মুখিয়ে থাকতেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ওই এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়েন তাঁরা। সেই সুযোগে এসব ফসলি জমি দখল করে নেয় পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক। সেই বিধ্বস্ত সড়কে কার্পেটিং হওয়ায় চিত্র পাল্টে যাচ্ছে।
কৃষিনির্ভর কাকারা ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগের মাধ্যম বিধ্বস্ত সড়কের সংস্কারকাজ শেষে চালু হয়েছে। ভাগ্য খুলছে কৃষকের। ১০ বছর ধরে সড়কের কোনো সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসী এটির নাম দেন ‘যাযাবর সড়ক’। এই সড়ক নিয়ে কালের কণ্ঠে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়। সড়ক সংস্কারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ বরাদ্দ দেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। গত ৩ নভেম্বর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সড়কটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি এনে সড়কের পাশে রাখছেন। থরে থরে সাজানো আছে চিঁচিঙ্গা, তিতকরলা, মুলা, মরিচ, ঝিঙে, ঢেড়স, লাউ, বরবটি ইত্যাদি। চট্টগ্রাম থেকে আসা আড়তদাররা নগদ দামে কিনে নিচ্ছেন এসব সবজি।
এলাকার কৃষক আবু তাহের চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সড়কটি চলাচলের উপযোগী হওয়ায় এলাকার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে কৃষক বেশ উপকৃত হচ্ছেন। বন্যার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সবজিচাষ শুরু করে সুফলও পেয়েছেন এবার। সবজির এত দাম আগে কখনো পাননি এখানকার কৃষক।’
স্থানীয় বাসিন্দা প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘এতদিন কৃষক কাকারা থেকে রিকশায় সবজি চকরিয়া পৌরশহরে আড়তে নিয়ে যেতেন। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যেত। জুটত না ন্যায্য দাম।’
তামাকচাষ ছেড়ে স্ট্রবেরিচাষ করা রেজাউল করিম মনে করছেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে স্ট্রবেরির ভালো ফলন হবে এবার। সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় ভালো বিপণন এবং দামও বেশি পাবেন।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বাহাদুর চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সড়কটি কার্পেটিং হওয়ায় এলাকাবাসী সুফল পেতে শুরু করেছেন।’
সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার সুফল আঁচ করতে পেরে আবাদ বাড়ার পাশাপাশি সবজি চাষেও বৈচিত্র্য এনেছেন কৃষক। এখানে আগাম ফুলকপির যেমন চাষ হয়েছে, তেমনি অনেক বছর পর ফিরে এসেছে ঐতিহ্যবাহী চীনা বাদামের চাষ। সামনের মৌসুমে তরমুজ আবাদও হবে বলে আভাস দিয়েছেন কৃষক।
এদিকে সবজিচাষ করতে না পেরে পার্বত্য এলাকায় সবজিচাষ করতে যাওয়া কৃষকও পুনরায় নিজ এলাকায় ফিরেছেন। এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আমীন বলেন, ‘সড়ক যোগাযোগ ভালো হওয়ায় পার্বত্য এলাকার বদলে এখন বাড়ির পাশের জমিতেই সবজিচাষ করেছি।’
কৃষক আবু বক্কর চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘এখন কাকারায় সবজিচাষ অন্য যেকোনো এলাকার তুলনায় সম্ভাবনমায় হয়ে ওঠেছে। দুই টনের একটি ট্রাক ১৬০০ টাকায় এবং তিন টনের একটি ট্রাক তিন হাজার টাকায় চট্টগ্রাম যাচ্ছে। ফলে প্রতিকেজি সবজি পরিবহনে খরচ পড়ছে মাত্র এক টাকা। আগে চকরিয়া পৌরশহরে নিতেই খরচ পড়ত কেজিতে তিন-চার টাকা।’
কৃষক আসহাব উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে আড়তদাররা সরাসরি ক্ষেতে এসে সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিগত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো দাম পাচ্ছি এবার।’
শুধু সড়কের কারণে কাকারার অনেক চাকরিজীবী চার কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলা সদরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেই চিত্র পাল্টে যাচ্ছে জানিয়ে কাকারা ইউনিয়নের মেম্বার মেহেদি হাসান নুরখান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘সড়কের কারণে কতো রোগীকে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে এর হিসাব নেই। সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ায় সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।’
পাঠকের মতামত: